চন্দ্রকান্তা – এক রাজকন্যার যৌনাত্বক জীবনশৈলী [৩৭]

Bangla Choti Golpo

Written by bourses

[৩৭] ক্লিয়োপেট্রা 

সর্বশেষ যেখানটা অবধি ডায়রির লেখা পর্ণা পড়েছে, তারপর সে খেয়াল করে বেশ অনেকদিন আর কোন লেখা নেই… তারপর অনেকটা দিনের তফাতে ফের চন্দ্রকান্তা লিখতে শুরু করেছে… তার মানে নিশ্চয় এর মাঝের কটা দিন খুব ব্যস্ত ছিল… অথবা লেখার মত কোন ঘটনা ঘটেনি… তাই আর লিখতে বসে নি… পর্ণা পড়া শুরু করে…
১০ই মে, বুধবার

I dare not, dear,–
Dear my lord, pardon,–I dare not,
Lest I be taken: not the imperious show
Of the full-fortuned Caesar ever shall
Be brooch’d with me; if knife, drugs,
serpents, have
Edge, sting, or operation, I am safe:
Your wife Octavia, with her modest eyes
And still conclusion, shall acquire no honour
Demuring upon me. But come, come, Antony,–
Help me, my women,–we must draw thee up:
Assist, good friends.

.
.
উফফফফ… গতকালটা শেষ হতে যেন একটু নিশ্চিন্ত হলাম… বাপরে বাপ… গত প্রায় মাস চারেক ধরে যা গেছে আমাদের উপর দিয়ে… এই শুধু মাত্র এই ক’টা দিনের জন্য… যাক বাবা… কথায় আছে, সব ভালো যার শেষ ভালো… এবার ক’টা দিন একটু শান্তি পাবো… আর ঝক্কি ঝামেলা নেই… সব ঠিক ঠাক মিটে গিয়েছে… এতটাও ভালো হবে, সেটা অবস্য আমিও ভাবি নি… আমি তো প্রায় আপ্লুত… শুধু আমি কেন? আমাদের হস্পিটালের প্রত্যেকটা স্টাফ মেম্বার খুশি… পুরো অনুষ্ঠানটা এত সুন্দর করে সংগঠিত হয়েছিল যে বাইরের থেকে যত ডেলিগেটসরা এসেছিল, প্রত্যেকে প্রশংসায় প্রায় পঞ্চমুখ যাকে বলে… নাহ!… এই এত দিনের কষ্ট বিফলে যায় নি মোটেও… প্রশংসা পেয়েছি আমিও… খুব… খুব… আমার সংগঠনের সাথে করা কাজ আর শুধু তাই কেন? আমার করা অভিনয়ও… উফফফফ… কি যে আনন্দ হচ্ছে ভাবলেই… অ্যান্থনি ক্লিওপেট্রার মত একটা জগৎ বিখ্যাত নাটক আমরা নামিয়ে ফেললাম!… আর আমি… আমি কিনা ক্লিওপেট্রার অভিনয় করলাম… ভাবা যায়? উফফফ… ভাবলে এখনও যেন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে আমার… অথচ আমার এই রোলটা প্লে করার কথাই ছিল না প্রথমে… কিন্তু কি ভাবে কি হয়ে গেলো… আমিই লিড রোলে প্লে করে বসলাম…
নাহ!… ব্যাপারটা গোড়ার থেকেই বলি… না হলে সবটা ঠিক বোঝা যাবে না…
ফ্রান্স থেকে জার্মানিতে এসে রয়েছি তা প্রায় অনেক দিনই হয়ে গেলো… জোর্ডি আর আমি… দুজনে মিলে প্রায় সংসার করছি বলা যেতে পারে… সকালে ঘুম থেকে ওঠা… সংসারের টুকিটাকি কাজ সেরে হস্পিটাল দৌড়ানো… সেখানে গিয়ে যে যার ডিপার্টমেন্টে ঢুকে পড়া… সারা দিন রুগি সামলানো, অপরেশন থিয়েটারে একের পর এক কাটা ছেঁড়া করে যাওয়া… সেই সাথে চেম্বারে বসে রুগি দেখা… সব কিছু সামলে বেরুতে বেরুতে প্রায় সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে যায় এক একদিন… না না… সব দিন নয় তবে… যেদিন একটু হাল্কা থাকে… সেদিন নিজের চেম্বারে বসেই হয়তো বই পড়ি, কিম্বা অন্যান্য ডাক্তারদের সাথে আলোচনায় মাতি… কারন জোর্ডি অন্য ডিপার্টমেন্টের নার্স… ওর ডিউটির সাথে আমার কাজের কোন মিল নেই… তাই আমি ফাঁকা নিজেকে করতে পারলেও ও পারে না ওর রোস্টার থেকে বেরিয়ে আসতে… আর তাই আমাকেও ওর জন্য অপেক্ষা করতে হয়… প্রথম প্রথম জোর্ডি আমায় বলেছিল বটে, ওর জন্য অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়তে, কিন্তু সেটা কি সম্ভব? একই বাড়িতে যাবো… সেখানে আমি আগে চলে যাবো আর ও পেছন পেছন পরে আসবে? তাই প্রথম দিকে জোর করলেও আমায় থেকে যেতে দেখে ও যে খুশিই হয়েছিল মনে মনে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় নি আমার… আর আমারই বা কাজ কি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে? তার চেয়ে হস্পিটালেই খানিক সময় কাটালে আখেরে লাভই হয়… একটু বেশিক্ষন থেকে গেলে কতৃপক্ষেরও সুনজরে আসা যায়… সেই সুযোগই বা ছাড়ি কেন?
বাড়ি ফেরার পথেই টুকিটাকি দরকারি কিছু কেনা কাটা থাকলে সেরে নিই… কারন একবার বাড়ি ঢোকার পর আর বেরুতে ইচ্ছা করে না মোটেই… আর আমি চাইলেও জোর্ডি ছাড়ে না আমায়… বাড়ি ঢোকার পর থেকে এক মুহুর্ত কাছ ছাড়া করতে চায় না জোর্ডি… প্রায় পারলে যেন সারাক্ষন আমার সাথে আঠার মত লেপ্টে থাকে…
শুধু কি ও? প্রশয় তো আমার তরফ থেকেও কিছু কম নেই… ও যেটা চায়, ইচ্ছা করেই তার তালে তাল মেলাই… জানি, এটা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ ঠিকই… কিন্তু একটু একটু করে আগের থেকে অনেকটাই ম্যাচিওর্ড হয়ে উঠেছি আমি ততদিনে… সেটাই তো স্বাভাবিক… তাই না? হোস্টেলে থাকতে যে বয়সটা ছিল আমার, সেটা আজ আর নেই… এখন আমি কিছু করার আগে ভাবি… তারপর পা ফেলি… না… তার মানে এটা ভাবার কোন কারন নেই যে আমার ভেতরের দর্পনারায়ণের মেজাজ একেবারে হারিয়ে গিয়েছে… সেটা প্রয়োজনে ঠিকই ঠিক সময় জেগে উঠবে যে, তাও জানি… কিন্তু তাও… আগের মত কথায় কথায় জেদ দেখাই না… পারিপার্ষিকতা বোঝার চেষ্টা করি কোন কিছু ডিসিশন নেবার আগে…
বাড়ি ফেরার পর রাতে তো কোন কথাই নেই… জোর্ডির আদরের ঠেলায় এক একদিন সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়ি… উফফফ… কি ভিষন ক্ষমতা ওর… সারাদিনের কাজের পরেও একটা দিনও আমায় ছাড়ে না আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে… প্রায় প্রতিদিনই বার দুয়েক আমার শরীরটাকে উল্টে পাল্টে না আদর করতে পারলে না কি ওর ভালো লাগে না… বোঝ একবার… তবে আমারও যে খারাপ লাগে, সেটাই বা বলি কোন মুখে? ওই পাগলিটাকে তাই তো যা চায়, তাই তুলে দিতে মন করে… যেমন করে চায় তেমন করেই ধরা দিই ওর বাহুডোরে…
এই ভাবেই বেশ কাটছিল আমাদের… প্রায় বলতে গেলে দুই কপোত কপোতির… তারপর একদিন হটাৎ করেই হস্পিটালে একটা সার্কুলার এলো হাতে… একটা অনুষ্ঠান হবে… হস্পিটালের পক্ষ থেকে… ম্যানেজমেন্ট ঠিক করেছে… সেটা কি? না প্রায় এক মাস ব্যাপি অনেক অনুষ্ঠানের সমষ্টি… ছোট ছোট আকারে সেগুলো রাখা হবে হস্পিটালের স্টাফ মেম্বারদের রোস্টার অনুযায়ী… যাতে হস্পিটালের কাজের কোন ক্ষতিও না হয়, আবার সকলেই যেন সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে…
ব্যাপারটা দেখে বেশ ভালো লাগলো… এমনিতে এই ক’মাসে আমার সাথে প্রায় সকলেরই একটা ভালো রিলেশন তৈরী হয়ে গিয়েছে… আমি শুধু মাত্র নিজের ডিপার্টমেন্টেই সীমাবদ্ধ থাকি না… হাতে কাজ না থাকলে বা সেই রকম কোন অপরেশন না থাকলে চেষ্টা করি অন্যান্য ডাক্তার নার্সদের সাথে আড্ডা দেওয়ার… অবস্য তাদের কাজের ক্ষতি করে মোটেই নয়… হি হি হি… আসলে আদতে তো যতই হোক, বাঙালীই না? তাই আড্ডাটা যেন না মারতে পারলে ঠিক পেটের খাবার হজম হয় না… এখন তো প্রায় অনেকেই হাত খালি থাকলে এসে হাজির হয় আমার চেম্বারেও… উঁকি দিয়ে দেখে ফ্রি আছি কি না… থাকলে ব্যস… বসে গেলো খানিকক্ষন… তাতে যেমন আড্ডাও হয়, আবার সকলের সাথে আলোচনায় অনেক ক্রিটিকাল কেস নিয়েও আলোচনা করা যায়… সমাধান সুত্র বেরিয়ে আসে কথার মধ্যে দিয়ে… খুব সহজে…
যাক সে সব কথা… এসব তো নিত্যদিনই ঘটে… তার জন্য ডায়রির পাতায় লেখার প্রয়োজন নেই কিছু…
যেটা বলছিলাম আমি… তা, সার্কুলার দেখে আমি প্রথমে অতটা গুরুত্ব দিই নি সত্যি কথা বলতে… কারন আমি এখানে আসার পর কখনও এই ধরনের কোন অনুষ্ঠানে পার্টিসিপেট করি নি… সে দিক দিয়ে একেবারে নভিস আমি… আর তাছাড়া সার্কুলারের ভিতরে যা লিস্টি দেখলাম তাতে আমার করার কিছুই নেই… নাচ, গান, আবৃতি, নাটক… প্রায় এক মাস ধরে চলবে সেটা আগেই বলেছি… আবার শেষদিন নাকি শহরের টাউন হলে মঞ্চস্থ হবে নাটকটা… সেখানে অনেক বাইরের থেকেও ডেলিগেটস্রা আসবে দেখতে…
সত্যি বলতে জার্মান ভাষাটা বলতে এখন অসুবিধা হয় না আমার, কিন্তু তাই বলে তো আমি আর জার্মান হয়ে যাই নি… কাজ হয়তো চালিয়ে নিতে পারি, কিন্তু জার্মান ভাষায় গান করা বা আবৃতি করার ক্ষমতা এখনও হয় নি একেবারেই… আর নাটক… ওরে বাবা… ওটা কোনদিনই করি নি… তা আজকে হটাৎ করে কি করে করবো? দেখলাম কোনটাই আমার কাপ অফ টি নয়… তাই চুপ চাপ চেপেই গিয়েছিলাম…
চেপে গিয়েছিলাম, কিন্তু চেপে যেতে দিলে তো!… বাপরে বাপ… সকলে মিলে এসে ধরলো… তোমায় কিছু একটা করতেই হবে… যত বোঝাই যে না রে বাবা, আমি এই সব পারবো না, কে শোনে কার কথা… আমি নাকি এত বন্ধুবৎসল, আর আমি কিছু না করে থাকবো, চলবে না সেটা…
শেষে অনেক কষ্টে ওদেরকে বলে রাজি করালাম যে ঠিক আছে, আমি কালচারাল কমিটিতে থাকবো… শুনে তাতেই রাজি ওরা… বলল যে ক্যারেক্টের কাস্টিংটা আমাকে দেখতে হবে, পরিচালকের সাথে থেকে… তবে একটা রক্ষে, নাটকটা হবে ইংলিশে… কারন যেহেতু বাইরের ডেলিগেটস্রাও আসবে, তাই ওটা মঞ্চস্থ হবে ইংলিশ ল্যাংগুয়েজে… যাতে সকলের সুবিধা হয়…
সে যাই হোক… এবার আলোচনার বিষয় হলো নাটক সিলেকশন… কি নাটক হবে? আমি যেহেতু কালচারাল কমিটির মেম্বার তাই আমাকেও আলোচনায় রীতিমত পার্টিসিপেট করতে হলো… এটা না সেটা… সেটা না এটা… এ একটা সাজেস্ট করে তো অন্যে নাকচ করে দেয়, আবার সে ওটা সাজেস্ট করে তো এ বলে না, ওটা হবে না… যা হয় আর কি… শেষে সর্বসন্মতিক্রমে ঠিক হলো যে শেক্সপিয়রের অ্যান্থনি ক্লিওপেট্রা মঞ্চস্থ হবে… সকলেই মোটামুটি এক মত হলো সর্বশেষে… আমরাও, মানে কালচারাল কমিটির মেম্বাররা হাঁফ ছাড়লাম এক প্রকার… অন্তত একটা নামে তো সকলে এক মত হলো…
নাম তো ঠিক হলো, এবার শুরু হলো চরিত্র অনুযায়ী হস্পিটাল থেকেই ডাক্তার, নার্স, স্টাফদের সিলেক্ট করা… কারন নাটকে চরিত্র প্রচুর… আর সমস্তটাই হস্পিটালের স্টাফ মেম্বারই অংশগ্রহণ করবে… তাই কে কোন চরিত্রে সঠিক হবে, তার সিলেকশনটাও আমাদেরই করতে হবে… তার জন্য রীতিমত সকলকে অডিশনের জন্য ডাকা হলো… কাস্ট সিলেকশনে ছিলাম আমি, জুলিয়েট বলে আর একটি মেয়ে আর নাটকের পরিচালক… ও হ্যা… নাটকের পরিচালককে আমরা বাইরের থেকেই ঠিক করেছিলাম… উনি একদম প্রফেশনাল ডিরেক্টর… ওনার ডাইরেকশনে বহু নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে দেশের বহু জায়গায়… জার্মানির বাইরেও ওনার সুখ্যাতি রয়েছে এই ব্যাপারে… এক ডাকে সকলে ওনাকে চেনে… ওনাকে সহজে রাজি করানো যায় নি প্রথমেই… কারন এই ধরনের অ্যামেচার থিয়াটারের সাথে উনি আগে খুব একটা থাকেন নি… কিন্তু আমাদের হস্পিটালের ডিরেক্টর নিজে ওনাকে রিকোয়স্ট করাতে আর না করতে পারেন নি জেনেছিলাম, তাই ওনাকে পেয়ে আমাদের সত্যিই খুব সুবিধা হয়ে গিয়েছিল… পরের দিকে বুঝেছিলাম একজন সত্যিকারের প্রফেশনাল পরিচালক আর অ্যামেচারিস্টএর মধ্যে কতটা তফাৎ থেকে যায়… ওনারা যে দৃষ্টিকোন থেকে পুরো সিনটা ভাবেন, সেটা অ্যামেচারিস্টদের পক্ষে হয়তো অতটা ভাবাই সম্ভব হয়ে ওঠে না… ওনার সাথে থাকতে থাকতে দেখেছি, এমন কত ছোট ছোট ইন্সট্রাকশান, যেটা হয়তো আমাদের মাথাতেও আসেনি, সেই সমস্ত ইন্সট্রাক্সনে সেই সিনটা যেন আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে…
যাক… যা বলছিলাম… তা ডাক্তার স্টাফদের মধ্যে থেকে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের কাস্টিং চলতে থাকলো… অ্যান্থনি, ক্লিওপেট্রা, অক্টাভিয়াস সিজার, জুলিয়াস সিজার, লেপিডাস, সেক্সটাস পম্পিয়াস, ডমিটিয়াস, ভেন্টিদিয়াস, ইরোস, স্কারাস… ইত্যাদি, ইত্যাদি… এছাড়া তো ছোট ছোট চরিত্র আছেই… লোক লস্কর, সৈন্য সামন্ত… মোটামুটি এক এক করে আমরা সে সব চরিত্র অনুযায়ী লোক ঠিক করতে থাকলাম… বেশ লম্বা প্রসেস… প্রথমে বুঝিনি সত্যি যে একটা নাটক মঞ্চস্থ করার আগে এত ঝক্কি থাকে বলে…
সব হয়ে যাচ্ছে ঠিক ঠাকই… কিন্তু সমস্যাটা গিয়ে আটকে যাচ্ছিল আসল ক্যারেক্টার নিয়েই… ক্লিওপেট্রা… ওটা নিয়ে কিছুতেই যেন ফাইনাল করা যাচ্ছে না… এত জনের অডিশন নেওয়া হল, কিন্তু কাউকেই পরিচালক মশাইয়ের পছন্দ হয় না কিছুতেই… হয় বলেন না, ও মোটা হবে না… অথবা পাতলা বেশি, সম্ভব নয়… তা না হলে এত বেঁটে ক্লিওপেট্রার চরিত্রের সাথে খাপ খায় না… আমরা তো বলতে গেলে লোক খুঁজে খুঁজে পাগল একেবারে… তাহলে? একজনকে যদি বা একটু পছন্দ হলো, কিন্তু ডায়লগ থ্রোইংএ প্রবলেম দেখা গেলো… তার লুকস না হয় মেকআপ দিয়ে চালিয়ে নেওয়া যেত, কিন্তু ডায়লগটাই যদি ঠিকঠাক না বলতে পারে, তাহলে তো হবে না! ওনার বক্তব্য হচ্ছে আমি ঘসে মেজে নিতে পারি, কিন্তু ক্লিওপেট্রার মধ্যে যেটা প্রধান প্রয়োজন, সেটা হলো তার রাজকীয় মেজাজটা… ওটা ভেতর থেকে ন্যাচারিলি ফুটে না বেরোলে নাকি চরিত্রটাই দাঁড়াবে না… শেষে আমরা অনেক দেখে শুনে একটা মেয়েকে সিলেক্ট করলাম… নাম জিনা… তাকে স্ক্রিপ্ট পড়িয়ে রেডিও করে ফেললাম… মোটামুটি সকলের পছন্দও ছিল ওকে দেখে… ডায়লগ বেশ ভালোই বলছিল, দেখতেও বেশ লম্বা আর স্লিম… আমরা ভাবলাম যাক, তাহলে শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেলো…
সেদিন ডিরেক্টর এসে ঢুকলো ঘরে, বসেই আমায় বলল যে কোথায় তোমাদের ক্লিওপেট্রা? ডাকো…
ডাক দিলাম জিনাকে… সে এলো… ডিরেক্টরের সামনে কিছু ডায়লগ আওড়ালো… ও বাবা… তৎক্ষনাৎ নাকচ করে দিলো ডিরেক্টর… যাহ!… এটাও গেলো? আমরা তো প্রায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছি তখন!… এবার? আর তো কেউ নেইও হস্পিটালে সেই রকম যে ঐ চরিত্রে খাপ খাবে… প্রায় সবাইকেই দেখা হয়ে গিয়েছে…
ডিরেক্টর তখন জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা, এমন কোন রেসোলিউশন আছে কি আপনাদের, যে সিকেশন কমিটির মেম্বারদের মধ্যে থেকে কাউকে নেওয়া যাবে না?”
ওনার কথায় সকলেই মাথা নাড়ে… না, সে রকম তো কিছু নেই!
উনি শুনে মাথা নাড়েন… তারপর আমার দিকে ফিরে বলে ওঠেন… “ডঃ কান্তা… আমি লাস্ট দিন সাতেক ধরে আপনাকে অবসার্ভ করছিলাম… আপনি একবার ট্রাই করে দেখুন তো! আপনি তো এই ক’দিনে এই স্ক্রিপটা অনেকবারই শুনেছেন… অডিশন নিতে নিতে… আপনি একবার বলুন দেখি ওখানে দাঁড়িয়ে…”
আমি তো শুনেই সত্যি বলতে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম প্রথমে… যাহঃ… সেটা আবার হয় নাকি? না না… আমি পারবো না!… প্রায় লাফিয়ে উঠি আমি ওনার কথা শুনে… বললাম, “পাগল নাকি? আমি জীবনে কোনদিন কোথাও অভিনয় করি নি… এমন কি পাড়ার ছোটখাটো নাটকেও নয়… আর আমি করবো ক্লিওপেট্রার পার্ট? ইমপসিবল্…”
কিন্তু আমি না বললে কি হবে? ডিরেক্টরের কথা শুনে ততক্ষনে বোর্ড মেম্বাররা প্রায় চেপে ধরেছে আমায়… সবাই মিলে বলতে শুরু করে দিয়েছে, “আরে… একবার ট্রাই তো করো… পারা না পারাটা তো পরের ব্যাপার… আর যদি না পারো, তাহলে তো জিনা আছেই… ওকে দিয়েই চালিয়ে নিতে হবে আমাদের… কিন্তু উনি যখন বলছেন, তখন কিছু তো বুঝেই বলছেন… তাহলে একবার ট্রাই করতে দোষের কি?”
আমি চুপ করে একটু ভাবলাম… সত্যি বলতে ওদের ওই একটা কথায় আমার ভেতরের কে যেন নাড়া দিয়ে গেলো আমায়… “যদি না পারো, তাহলে তো জিনা আছেই”… যদি না পারো… এটা আমার পীঠে যেন একটা চাবুকের মত আছড়ে পড়ল কথাটা… আমি যদি অডিশন দিই… তাহলে আমায় পারতেই হবে… সেখানে আর কোন অপশন নেই… আমি একটা পরীক্ষায় বসবো, আর অকৃতকার্য হবো? সম্ভবই নয়… অডিশন দিলাম না, সেটা অন্য কথা… কিন্তু অডিশন দিলাম অথচ সিলেক্ট হলাম না… সেটা আমার সহ্য হবে না… আমি হারতে জানি না… ঠিক আছে… আগে কোনদিন করি নি তো কি হয়েছে? নতুন একটা কিছু শেখা হবে… সব কিছুরই তো প্রথম থাকে… মানুষ তো পেট সব কিছু জেনেই আসে না… আর সেটা যারা আসে, তারা ভাগ্যবান… আমি মনে মনে আমার মাইন্ড সেট করে ফেললাম… যে তিতাস ঘর ছেড়েছিল একদিন, যে মনের জোরে… সেই আর্জটাই সেদিন ফের সমুদ্র মন্থনের মত ভিতর থেকে উঠে এলো আমার মস্তিষ্কে… আমার শরীরের শিরা উপশিরাতে আবার আগুন হয়ে দৌড়তে শুরু করলো… “বেশ… আমি রাজি…দেবো অডিশন…” দৃপ্ত কন্ঠে বললাম আমি ওদের… “আমায় এক ঘন্টা শুধু সময় দাও ডায়লগটাকে মুখস্থ করতে…”
সিনটা ছিল ক্লিওপেট্রার সাথে অ্যান্থনির প্রথম দেখা হচ্ছে, ক্লিওপেট্রার রাজসভাতে…
এক ঘন্টাও পুরো নিলামনা ডায়লগ মুখস্থ করতে… ধীর পদক্ষেপে গিয়ে নিজের পজিশন নিলাম… সামনে সকলে… কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে… সকলের চোখ তখন আমার উপরে… অথচ কাউকেই যেন আমি তখন আর দেখতে পাচ্ছি না… কারন ততক্ষনে আমার ভিতরে যেন দর্পনারায়ণের রক্ত ঢেউএর মত উথাল পাথাল হতে শুরু করে দিয়েছে… কানে এলো পরিচালকের নির্দেশ… “অ্যাকশন…”
শিড়দাঁড়া সোজা হয়ে গেলো আমার… দৃপ্ত কন্ঠে শুরু করলাম ডায়লগ বলা… প্রতিটা শব্দ যেন রাজকীয় ভঙ্গিমায় ঝরে পড়তে লাগল আমার ঠোঁট থেকে… কি করে যে ওই ভাবে ভয়েস মডিউলেশন করতে থাকলাম, নিজেই বুঝতে পারলাম না… যেন সহজাত ভাবেই ডায়লগ গুলো বেরিয়ে আসছিল আমার ভিতর থেকে… কোন রকম বাড়তি প্রচেষ্টা ছাড়াই…
আমার সিনটা শেষ হলে কয়েক মুহুর্ত স্তব্দ হয়ে রইল পুরো ঘরটা… এই ভাবে সবাইকে চুপ থাকতে দেখে আমি বুঝে গেলাম… আমি অকৃতকার্য হয়েছি আমার পরীক্ষায়… ঠিক যেটা আমি চাইছিলাম না কিছুতেই… সেটাই ঘটল তাহলে আমার জীবনে… তাহলে তিতাসও হারতে পারে!… ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে জল চলে এসেছিল আমার… মাথার মধ্যেটায় কেমন যেন করছিল একটা দুঃসহ যন্ত্রনায়… আর ঠিক তখনই… এক সাথে সকলের হাততালিতে ফেটে পড়ল যেন ঘরের বাতাস… আমার জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি হাততালি দিচ্ছেন পরিচালকও… সকলে থামলে এগিয়ে এলেন উনি… আমার হাতদুটো ধরে বললেন, “এইটা… এই অ্যাটিটিউডটাই খুঁজছিলাম আমি আমার ক্লিওপেট্রার মধ্যে… ওয়ান্ডারফুল… এক্সেলেন্ট… আমি জানতাম, আমার চয়েস কখনও ভুল হবে না… তুমিই উপযুক্ত এই চরিত্রের জন্য…”
আমি তখন কথা বলবো কি? নিজেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না যে এতটা ভালো অডিশন দিয়েছি বলে… তাহলে তিতাস পারলো!
এর পর যেন রিহের্সালের দিন গুলো প্রায় ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলল… সাথে নিজের সার্জারি… তখন যেন আমার আর নাওয়া খাওয়ারও সময় নেই… বাড়ি ফেরার কোন সময় অসময় নেই… জোর্ডি খিঁচখিঁচ করে… কিন্তু তখন আমি এক নতুন নেশায় মেতে উঠেছি… কোনদিন ভাবিনি যে অ্যাক্টিং করতেও এত ভালো লাগতে পারে বলে… ডায়লগ মুখস্থ করতে আর তা রিহের্সালের সময় থ্রো করার সময় যেন ভেতর থেকেই কেমন একটা পরিবর্তন ঘটে যেত আমার মধ্যে… তখন যেন আমি, চন্দ্রকান্তা নই… সত্যিই মিশরের রানী বলে মনে করতাম নিজেকে… যতবার আমি গিয়ে দাঁড়াতাম সার্কেলের মধ্যে, ততবার যেন ভিতরের রক্তকণিকা আগুন হয়ে ধমনীর মধ্যে দৌড়ে বেড়াতো…
প্রান ঢেলে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করে দিয়েছিলাম নাটকটার জন্য… সকলে রিহার্সাল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও, আমার যেন উৎসাহের কোন খামতি ছিল না… সারাটা দিনের পরিশ্রমের পরে রিহার্সাল রুমে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকতাম স্ক্রিপ্ট নিয়ে… সিনগুলো মুখস্থ করতাম… তারপর সেই সিনের অন্যান্য চরিত্রের মানুষগুলোকে বাধ্য করতাম প্রায় আমার সাথে সেই সিনগুলো অভিনয় করে দেখার জন্য… কখন শুধু মাত্র একা একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আউড়াতাম নিজের ডায়লগগুলো…
মোটামুটি বিকালের দিকেই আমাদের নাটকের পরিচালক আসতেন… উনিও দেখিয়ে দিতেন টুকটাক… কি করতে হবে আর কি না… প্রথম দিকে তো সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম হাতদুটোকে নিয়ে… ডায়লগ বলার সময় হাতদুটোকে কোথাও রাখবো, সেটাই যেন বুঝে উঠতে পারতাম না… আস্তে আস্তে শিখলাম সেটাও… মুখস্থ বিদ্যাটা আমার বরাবরই ভালো বলে সিনগুলো মনে রাখতে অসুবিধা হতো না… একবার পড়লেই মাথার মধ্যে ঢুকে যেত… তারপর শুধু একটু ঝেলে নেওয়া… ব্যস… তাই খুব তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে উঠতে লাগলাম নাটকটার জন্য আমি…
এর মধ্যে টোটাল মেকআপ আর প্রস্থেটিক্সএর জন্য পরিচালক দায়িত্ব দিয়েছে একটি আর্ট কলেজকে… কারন ওনার বক্তব্য হলো মেকআপ প্রফেশনালকে দিয়ে না করালে চরিত্রের চিত্রায়ণ ঠিক হয় না…
কলেজ থেকেই ওদের বেস্ট কিছু সিনিয়র স্টুডেন্টকে পাঠিয়েছিল আমাদের সাথে মিট করার জন্য… মোট ছ’জনের দল… ওদের সাথে পরে কিছু জুনিয়র এসে যোগ দিয়েছিল ওদেরকে হেল্প করার জন্য… এই ছয়জনের দলে প্রত্যেকেই এক একজন বিভিন্ন আর্টএ পারদর্শী… বডি পেন্টিংএর জন্য যে এলো, সে, দিমিত্রিভ খুজোস… চেক ছেলে…
আমি প্রথমে বডি পেন্টিং শুনে একটু অবাকই হয়েছিলাম… কারন নাটকে সকলে সাজে জানতাম, কিন্তু বডি পেন্টিং আবার কিসের প্রয়োজন?… পরিচালককে জিজ্ঞাসা করতে উনি বললেন যে ওটা নাকি স্পেশালি ক্লিওপেট্রার জন্য দরকার… ক্লিওপেট্রার ফুল বডি পেন্টিং করানো হবে… সেই মতই আমার সাথে ছেলেটিকে ডেকে আলাপ করিয়ে দিলো পরিচালক…
শিল্পী মানুষ ছেলেটি… এই রকমই বোধহয় হয় শিল্পীরা… কেন জানি না! বাবার মুখটা হটাৎ করে ভেসে উঠেছিল আমার মনের মধ্যে এক ঝলকের জন্য দিমিত্রিভকে দেখার পরে… পাতলা গড়ন… বেশ লম্বা… গায়ের রঙ প্রচন্ড ফর্সা… ইংল্যান্ড বা জার্মানদের মত লাল মুখো নয় মোটেই… বরং উজ্জল ফর্সা যাকে বলে… মুখটা ইষৎ লম্বাটে… টিকালো নাক… একেবারে যেন টিয়াপাখির ঠোঁট… পাতলা ঠোঁটদুখানি… বেশ লাল… বোঝাই যায়, কোন সিগারেটএর নেশা নেই… তাই ঠোঁটগুলোতে কোন ছোপ পড়েনি… এক মাথা ঘন কোঁচকানো ঢেউ খেলানো সোনালী চুল… অগোছালো… লম্বা… ঘাড় অবধি নেমে এসেছে… বোঝা যায় কোন রকমে যেন হাতের টানে আঁচড়ে রেখেছে চুলগুলো… একদম কেয়ারলেস অ্যাটিটিউড… কিন্তু সব কিছুর মধ্যে যেখানে আমার নজর আটকে গেলো, তা হলো দিমিত্রিভের চোখদুখানি… অদ্ভূত গভীর সবুজ… যেন পৃথিবীর সকল স্বপ্ন ওই সবুজ চোখের তারায় ভেসে রয়েছে… এত উদাসি… অথচ কি গভীর… চোখের উপরে চোখ রাখলে যেন বিশ্ব সংসার সব ভুলে যাওয়া যায়… ঠিক যেন জীবন্ত যীশু সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার…
কথা বলে ভিষন আস্তে… একটু থেমে থেমে… যেন প্রতিটা কথা অনেক ভাবনা চিন্তা করে তবে বলে সে… কোন তাড়াহুড়ো নেই কথার মধ্যে… আর যখন কথা বলে, তখন একদম সোজা চোখের পানে তাকিয়ে কথা বলে মানুষটা… অন্য আর সব পুরুষদের মত ঠিক নয় যেন… কারন অন্য পুরুষদের দেখেছি কথার ফাঁকে তাদের চোখ ঘুরে বেড়ায় আমাদের শরীরের উপরে… কথার ফাঁকে মেপে নিতে চায় উল্টো দিকে থাকা নারীর সম্পদগুলো চোখ দিয়ে… কিন্তু সে দিকে এই মানুষটা সম্পূর্নই যে উদাসিন, সেটা বুঝতে পারি প্রথম দর্শনেই… হয়তো নারী শরীর এতটাই দেখেছে বডি পেন্টিং করতে গিয়ে যে সে সম্বন্ধে আলাদা কোন ট্যাবু আর অবশিষ্ট নেই মানুষটার… অস্বীকার করবো না, প্রথম দর্শনেই মানুষটাকে ভালো লাগে আমার… এটা হয়… সব সময় কিন্তু নয়… মাঝে মধ্যে… এমন কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের ফার্স্ট অ্যাপিয়ারেন্সেই মন জয় করে নিতে পারে… কেমন যেন একটা আলগা ভালো লাগা মিশে থাকে তাদের দিকে তাকালেই… সে ভালো লাগার মধ্যে কোন তীব্রতা থাকে না… কিন্তু একটা আকর্ষণ কাজ করে অবচেতনে… দিমিত্রিভও যেন সেই ধরনেরই মানুষ… শান্ত… স্নিগ্ধ… পরিমার্জিত… আমার সাথে আলাপ করিয়ে দিতে আমি হাত বাড়িয়ে দিই ওর দিকে… “হাই… আমি চন্দ্রকান্তা…”
প্রত্যুত্তরে আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে ওঠে “হ্যালো ডক্টর… নাইস টু মীট ইয়ু…”
আমার ধরা হাতটার দিকে নজর নামাই… কি সুন্দর লম্বা সরু সরু আঙুলগুলো… আমার হাতটাও ধরেছে যেন কোন এক দামী শিল্পকর্ম হাতে তুলে রেখেছে… আলগোছে, কিন্তু যত্ন সহকারে…
পরিচালকের সময় নেই ওখানে দাঁড়িয়ে থাকার… তাই আলাপটা করিয়ে দিয়েই কাজের অজুহাতে চলে গেলেন কোথাও…
আমার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের পকেটে হাতদুটো ঢুকিয়ে রেখে মৃদু হেসে দিমিত্রিভ প্রশ্ন করে, “আপনি তো ক্লিওপেট্রা হচ্ছেন?”
মাথা নাড়ি আমি… হ্যা… তারপরেই আমার মনের ভেতরে থাকা প্রশ্নটা করি ওকে… “আচ্ছা, এখানে বডি পেন্টিংএর কি দরকার, সেটা বুঝলাম না…”
আমার প্রশ্ন আবার মৃদু হাসে দিমিত্রিভ… গভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনি কখনও মিশরের রানীকে দেখেছেন?” তারপর একটু থেমে বলে, “মানে ছবিতে?”
আমি ফের মাথা ঝাঁকাই… হ্যা… দেখেছি বলে… কারন ছবিতে তো দেখে থাকাটা কোন নতুন কিছু নয়… তাহলে এ প্রশ্ন দিমিত্রিভ করছে কেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাই ওর দিকে…
আমার প্রশ্নটা বোধহয় অনুভব করে দিমিত্রিভ… মৃদু হেসে বলে… “আমি আপনাকে প্রথম দেখে রীতি মত চমকে গিয়েছিলাম… সত্যিই বলছি… কারন আমাকে বলা হয়েছিল যে একজন কে সিলেক্ট করা হয়েছে ওই ক্যারেক্টারটার জন্য… কিন্তু বিশ্বাস করুন… সেটা যে এতটা পার্ফেক্ট, সেটা ভাবি নি… বিশেষ করে ক্লিওপেট্রার ওই স্লিম ফিগারের সাথে আপনার যেন হুবহু মিল রয়েছে…” বলতে বলতে থামে দিমিত্রিভ…
ওর মুখে শুনে বেশ ভালো লাগে আমার… আরে যতই হোক… নিজের প্রশংসা কোন মেয়ে না শুনতে ভালোবাসে? আমি কোন উত্তর দিই না… চুপ করে তাকিয়ে থাকি ওর পানে…
বলে চলে দিমিত্রিভ… “কিন্তু মিশরীয় রাজপরিবার যে ভাবে সাজ সজ্জা আর অলঙ্কার ব্যবহার করতো সে তো না হয় আমরাও আপনাদের সেই ভাবেই সাজিয়ে তুলবো, কিন্তু ওদের গায়ের রঙটা একটা বিশেষ রকমের… না তামাটে আবার না ফর্সা… বরং বলা যেতে পারে অনেকটাই গোল্ডেন ক্লিওপেট্রার গায়ের রঙ… আর সেই কারনেই আপনার গায়ের স্কিনের কালার আমরা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবো একদম সেই ভাবেই… যাতে করে ফিগার আর লুকের সাথে আপনার অ্যাপিয়ারেন্সটাও একদম মিশরীয় করে তোলা যায়…”
এবার যেন অনেকটাই পরিষ্কার হলো আমার কাছে… “আচ্ছা… এবার বুঝেছি…” মাথা নাড়ি আমি… “কিন্তু শুধু গায়ের রঙ করার জন্য আপনার মত একজন প্রফেশনালকে কি প্রয়োজন ছিল?” ফের ঘুরিয়ে প্রশ্ন রাখি দিমিত্রিভের সামনে…
আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো দিমিত্রিভ… ঠোঁটের কোনে হাসিটা যেন লেগেই থাকে তখনও… “ঠিক… আপনি নিজেও নিজের গায়ের রঙটা যে কোন গোল্ডেন কালার দিয়ে রাঙিয়ে নিতে পারতেন… সেটা অস্বীকার করবো না… কিন্তু যখন আমার কাজ শেষ হবে, তখন আপনি আপনার এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক পেয়ে যাবেন, কেন আমি… আর কোন অ্যামেচারিস্ট নয়… সেটা…”
আমি দিমিত্রিভের কথায় কাঁধ ঝাঁকাই… “বেশ… দেখবো… আপনার হাতের জাদুর…”
“আমি সেটা দেখানোর জন্য উদ্গ্রিব হয়ে অপেক্ষায় রইলাম…” ফের ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে উত্তর দেয় দিমিত্রিভ… তারপরেই কি ভেবে বলে ওঠে, “এবার আমায় যেতে হবে… পরে আবার কথা হবে’খন…”
আমিও হেসে ফের আর একবার হাত বাড়িয়ে দিই ওর দিকে… “নিশ্চয়ই… আবার দেখা হবে তো বটেই আমাদের… বাই…”
চলে যায় দিমিত্রিভ… আমি ফিরে আসি আমার চেম্বারে।

  ভার্জিন বান্ধবীকে জাপটে ধরে ধোনটা ঢুকিয়ে দিলাম

ক্লিয়োপেট্রা – ২

“হ্যাভ ইয়ু ড্রন দিস?… ওয়াও! বিউটিফুল!… বাট… আই থিঙ্ক, ইফ ইয়ু ইয়ুজ আ লিট্টল বিট ভাইব্রেন্ট কালার্স, দেন দ্য ডিজাইন অফ দিজ ড্রেসেস উইল লুক মোর কালারফুল… মোর প্রমিনেন্ট!… ইজন্ট ইট?” কানের ঠিক পাশে ঝরে পড়া কথাগুলো শুনে চমকে উঠে মুখ তুলে তাকিয়ে ছিলাম… কেন জানি না… কথাগুলো কানে যেতেই কেমন অদ্ভুত ভাবে মনের মধ্যে একটা দোলা দিয়ে গিয়েছিল… অনেক… অনেক দিন আগে কিছু শোনা স্মৃতি যেন আবার নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল চোখের সামনে… কথাগুলো এক না হয়েও যেন অনেকটাই সেই একই রকম… “কিন্তু আমার মনে হয় ছবির প্রেক্ষাপটে যে রঙটার ব্যবহার হয়েছে, সেখানে আর একটু সাদার মিশেল থাকলে সামনের অবজেক্টটা আরো বেশি করে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠত!” বহুদিন আগে একটি সপ্রতিভ ভারতীয় যুবক এক অসামান্য বৃটিশ সুন্দরীর আঁকা একটি পেনটিং দেখিয়ে এমনটাই বলে উঠেছিল এক আর্ট গ্যালির এক্সিবিশনে… প্রথমে সেই সুন্দরী যুবকের কথায় ভ্রূ কুঁচকে উঠেছিল… ভেবেছিল একজন ভারতীয় আর্টএর বোঝেটাই বা কি? কিন্তু পরবর্তী কালে কি মনে হতে যুবকের কথা মত চেষ্টা করেছিল নিজের আঁকা ছবিটার উপরে রঙের প্রলেপ তুলে ধরতে, আর যার ফলে সত্যিই যেন আরো জীবন্ত হয়ে উঠেছিল তার আঁকা ছবিটা… তারপর তো ইতিহাস… দুটো প্রাণ এক হয়ে যাওয়ার…
তাই সেই কথার অনেকটারই পুনারুবৃত্তিতে আমার সারা গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠল… আমি অবাক দৃষ্টিতে মুখ তুলে তাকিয়ে রইলাম বক্তার পানে… ওই গভীর সবুজাভ চোখে চোখ রেখে… মনের মধ্যে তখন এক অবোধ ঝড় বয়ে চলেছে… একি শুনলাম আমি!
“হেই! হ্যালো!… আর ইয়ু ওকে?… আই হ্যাভেন্ট টোল্ড দিজ টু হার্ট ইয়ু… অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি, ইফ আই ডান ইট!” আমার অবাক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে গভীর স্বরে ফের বলে ওঠে দিমিত্রিভ… ভাবে হয়তো কথাগুলো বলে আমার মনে আঘাত দিয়ে ফেলেছে সে…
সম্বিত ফেরে আমারও… তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিই ওর চোখের উপর থেকে… অকারণেই কি রাঙা হয়ে উঠেছিল আমার গাল দুখানি? ছি ছি… এই ভাবে অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকা উচিত হয় নি আমার… কি ভাবলো আমায় কে জানে!… কোথায় কত বছর আগের লন্ডনের আর্ট গ্যালারীতে দেখা হওয়া দুটি মানুষের আর কোথায় জার্মানীর ফ্র্যাঙ্কফার্টের হসপিটালএর রিক্রিয়েশন রুম… আমি মাথা নাড়ি তাড়াতাড়ি… “নো নো… আই হ্যাভেন্ট মাইন্ড এনিথিং… আকচুয়ালি আই হ্যাভ গট লস্ট ইন মাই মেমারী…”
“ওহ!… দ্যটস্ ফাইন…” হাত তুলে কাঁধ ঝাঁকায় দিমিত্রিভ… ঠোঁটের কোনে তখন যেন যিশুর হাসি লেগে রয়েছে বলে মনে হয় আমার…
“আসলে… মানে একটু চেষ্টা করছিলাম, নাটকের ক্যারেক্টারগুলোর ড্রেস কেমন হতে পারে সেটাই একটা স্কেচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে…” অপ্রতিভবে নিজের কাজের কারন দর্শাবার ইচ্ছায়…
“তুমি আঁকা শিখেছো কোথাও?” সরাসরি প্রশ্ন করে দিমিত্রিভ…
মাথা নাড়ি আমি… “নাহ!… ঐ আর কি… নিজের মনেই ইচ্ছা মত তুলির টান দিই সময় সুযোগ পেলে…” বুঝতে পারি, দিমিত্রিভের মত একজন এত বড় প্রফেশনাল আর্টিস্টের সামনে কি ভিষন বালখিল্লের মত কাজ করে ফেলেছি… হয়তো মনে মনে হাসছে সে আমার এ হেন ছেলেমানুষি দেখে… এখন যেন নিজেরই নিজের উপরে রাগ হচ্ছে বেশ… কি দরকার ছিল? নিজের থেকে এই ভাবে ক্যারেক্টারের পোষাক আঁকার? ওটা তো সত্যিই আমার কাজ নয়… যার কাজ তার সাজে, মাঝখান থেকে দিমিত্রিভের কাছে আমার একটা বাজে ইপ্রেশন হয়ে গেলো… ইশশশশশ… একটা বোকার মত কাজ করে বসলাম…
“সত্যিই তুমি আঁকা শেখোনি?” দিমিত্রিভের গলার স্বরে বিস্ময়… একটু ঝুঁকে টেবিলের উপরে থাকা আমার করা স্কেচগুলো তুলে নেয় হাতে… তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছে নিয়ে পর্যবেক্ষন করতে থাকে সেগুলো… আমার বুকের মধ্যে তখন হাপড়ের টান… কি ফ্যাসাদেই না পড়লাম নিজের থেকে উপযাযক হয়ে এই গুলো আঁকতে গিয়ে… কি প্রয়োজন ছিল এ সবের?… এখন এই মানুষটার চোখে আমার সমস্ত ভুলত্রুটি গুলো এক এক করে উঠে আসবে, আর তখন লজ্জার শেষ থাকবে না একদম… ইসসসস… আমার মনে হচ্ছিল লজ্জায় মিশে যেতে…
হাতের থেকে আঁকা কাগজগুলো ফের টেবিলের উপরে নামিয়ে রেখে চুপ করে খানিক তাকিয়ে থাকে দিমিত্রিভ আমার দিকে… এ আবার কি? আমার দিকে এই ভাবে তাকিয়ে কি দেখে আবার? মনের মধ্যে তখন আমার হাজার প্রশ্ন…
“তোমার তো রক্তে শিল্প!” গভীর স্বরে বলে ওঠে দিমিত্রিভ…
“অ্যাঁ!” আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, এটা প্রশংসা নাকি…
আমার চিন্তার মাঝেই ফের বলে ওঠে দিমিত্রিভ… “তোমার পরিবারের কারুর কি শিল্পের সাথে যোগাযোগ আছে?”
সে তো আছেই… হ্যা… কথাটা তো মিথ্যা নয় একেবারেই… সত্যিই তো আমার রক্তে শিল্প… মা, বাবা দুই তরফ থেকেই… “হ্যা… আমার মা আর বাবা, দুজনেই শিল্পী…” ধীরে মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিই দিমিত্রিভের প্রশ্নের…
আমার জবাবে মৃদু হাসি খেলে যায় দিমিত্রিভের ঠোঁটে… “এবার বুঝেছি… কি করে তুমি এত সুন্দর ইলাস্ট্রেশনগুলো আঁকলে আঁকা না শিখেই… হুম…” সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকায় সে আবার আমার আঁকা পৃষ্ঠার গুলোর দিকে… তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, “তুমিই এই গুলো এঁকে শেষ করবে… আমি ভেবেছিলাম আমার কলেজের একজন প্রফেশনাল আর্টিস্টকে বলবো আমায় এ্যাসিস্ট করার জন্য, কিন্তু না… তার কোন দরকার হবে না… আমায় এ্যাসিস্ট করবে তুমি… আমি তোমার আঁকা ইলাস্ট্রেশন ধরেই ড্রেস ডিজাইন করতে বলবো ম্যানেজমেন্টকে…”
আমি সত্যি বলতে এতটা ভাবি নি… দিমিত্রিভের কথায় আপ্লূত… বাচ্ছা মেয়ের মত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই ওর সামনে… চোখে মুখে তখন আমার এক রাশ উত্তেজনা… “সত্যিই বলছো তুমি? সত্যিই আঁকাগুলো এতটাই ভালো হয়েছে?” আমি যেন নিজেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না কথাগুলো কিছুতেই…
মাথা নাড়ে দিমিত্রিভ… ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি… “হ্যা ডক্টর… আমি সত্যিই বলছি… প্রতিটা আঁকাই ভিষন অ্যাকিউরেট হয়েছে…” তারপর একটু থেমে বলে, “কিছু মিসটেক আছে ইলাস্ট্রেশনে ঠিকই… কিন্তু সেগুলো নমিনাল… ওগুলো আমি দেখিয়ে দেবো’খন… সেটায় খুব একটা অসুবিধা হবে না…”
একদম খেয়ালের বশে ওগুলো এঁকেছিলাম… কিন্তু এখন এই ভাবে অ্যাপ্রুভ হয়ে যাবে, ভেবেই একটা ভিষন আনন্দ হচ্ছে আমার… আমি ওর দিকে তাকিয়ে বোকার মতই দুম করে জিজ্ঞাসা করলাম… “কবে দেখাবে?” বলে ফেলেই নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম… আমি কি একটু বেশিই উপযাযক হয়ে বলে ফেললাম না? খারাপ ভাবলো না তো আবার আমায়?
ও কিন্তু আমার কথাটাকে এই ভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখলোই না বোধহয়… একটু ভাবলো, তারপর বলল, “আজকে তো হবে না… আমার ক্লাস আছে… আমি কাল দুপুরে আবার আসবো… তখন তোমার সাথে বসবো… তুমি কি ফ্রি থাকবে সেই সময়?”
“থাকবো…” উত্তর দিই আমি সসব্যস্ত হয়ে… কারন দিমিত্রিভের কাছ থেকে এই ভাবে এত সহজে আঁকাটা দেখে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে মন চায় না আমার কোন মতেই…
আমার এই ভাবে উত্তর দেওয়া দেখে ফের মুচকি হাসে দিমিত্রিভ… একটু কি বেশিই আগ্রহী ভাবলো আমায়? মনে মনে ভাবি আমি… পরক্ষনেই সে ভাবনা সরিয়ে দিই ভিতর থেকে… ভাবলে ভাবুক… আমার জেনে নেওয়ার ইচ্ছা, তাতে যদি একটু ভেবেই থাকে, তাতে আমার ভারী বয়ে গেলো…
পরদিন ঠিক দুপুরের দিকে আমি রিক্রিয়েশন রুমে বসে আছি, দেখি দিমিত্রিভ এসে হাজির… সাথে আরো বেশ কয়েকজন… ঘরে ঢুকে আমার দিকে তাকালোই না একবারের জন্যও… যেন ঘরের মধ্যে এই এত বড় একটা মানুষের কোন অস্তিত্বই নেই… সোজা এগিয়ে গেলো ডাইরেক্টরের দিকে… সেখানে চেয়ার টেনে নিয়ে তার সাথে বসে কথা বলতে শুরু করে দিলো… এখানে যে আমি বসে আছি তার যেন কোন গুরুত্বই নেই… অদ্ভুত… ও আসবে বলে সেদিন আমি একটা খুব সুন্দর টপ আর স্ল্যাক্স পরে এসেছিলাম… ভিতরে ততদিনে আমি ব্রা পড়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি… এমনিতেও দেখেছি যে এখানে সচারাচর কেউ তেমন ব্রা পড়ে ঘোরে না… আর যারা পড়ে, তাদের বুক খুব বেশী বড় বলেই পড়ে… সেখানে আমার বুক কোন মতেই ঝোলা নয়… সুগঠিত… তাই ভিতরে ব্রা না পড়লেও খারাপ দেখায় না… আর যখন হস্পিটালের ডিউটিতে থাকি, তখন তো আমার পোষাকের উপরে সাদা হাউসকোট চাপানোই থাকে, তাই পেশেন্টদের সামনে যেতে কোন রকম অসুবিধার সন্মুখিন হতে হয় না আমার… সেদিনও তাই ব্রা পড়ার প্রয়োজন বোধ করি নি… আর টপএর কাপড়টা ভিষন নরম হওয়ার দৌলতে একেবারে লেপ্টে বসেছিল আমার বুকের সাথে… আসলে আমি হয়তো মনে মনে চেয়েছিলাম আমার ফিগারটা দেখাতে দিমিত্রিভকে… ভেবেছিলাম পাশে যখন এসে দাঁড়াবে আমার, তখন ওর চোখে নিজেকে বেশ এ্যাট্রাক্টিভ করে তোলা… যতই হোক… আদতে তো আমি মেয়েই… নাকি? আর সেই কারণেই আমি তো ভেবেছিলাম গতকালের ওই ধরণের কথা বার্তার পর আগে এসে আমার কাছেই দাঁড়াবে… কিন্তু তা না… পাত্তাই দিলো না দেখি… মেয়েলি অভিমান-টান আসে না আমার… কিন্তু এই ভাবে অবজ্ঞাও সহ্য হয় না কিছুতেই… তাও বসে থাকলাম খানিক… যদি উঠে আসে আমার কাছে… কিন্তু কোথায় কি? আসা ইস্তক তো ডিরেক্টরের সাথেই বসে আছে… প্রায় আধা ঘন্টা পেরিয়ে গেলো… এক বারের জন্যও মুখ তুলেও তাকালো না এদিক পানে… তাহলে? তবে কি মন বদলালো? কাল যে বললো আমার ইলাস্ট্রেশন গুলোই ব্যবহার করবে নাটকে!… তাহলে কি অন্য কিছু ভেবে এসেছে আজ? তাই যদি হবে, আমি কেন বেকার বেকার নিজের ডিউটি অফ করে বসে রইলাম ওর জন্য? কি দরকার ছিল সেটার? যেমন রোজ নিজের হস্পিটাল রাউন্ড সেরে তবে আসি, তেমনই আসতাম না হয়… ফালতু কিছু সময় নষ্ট করলাম… মনে মনেই গরজরাতে লাগলাম টেবিলে একা বসে বসে… আনমনে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম সামনে টেবিলের উপরে থাকা ইলাস্ট্রেশনগুলো নিয়ে…
নাহ!… আরো প্রায় পনেরো মিনিটের মত সময় পার হয়ে গিয়েছে… আর এই ভাবে তীর্থের কাকের মত বসে থাকতে ভালো লাগে না আমার… যেন আমার দায় সমস্ত কিছুর… আর কারুর কোন দায় নেই এই পুরো নাটকটার ব্যাপারে… না… মানে আর কারুর নেই মানে সেটা বলতে চাইছি না অবস্য… বাকিরা তো যে যার পার্ট নিয়ে রিহের্সালে ব্যস্ত… আমিই হয়েছি এক ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো… না পারছি নিজের কাজে মন দিতে, না গিয়ে নিজের পার্টটা রিহার্সাল করতে… কাল কি একটা স্বপ্নের ফানুস উড়িয়ে দিয়ে গেলো লোকটা, আর সেটা ধরে বেকার বেকার চুপ করে তেনার অপেক্ষায় বসে রয়েছি… কখন উনি এসে আমায় একটু দেখিয়ে দেবেন… আমায় উদ্ধার করবেন… এবার সত্যিই উঠে দাঁড়াই আমি… টেবিলের উপরে ছড়িয়ে থাকা কাগজগুলোকে এক সাথে জড় করে নিয়ে তুলে নিই হাতে… ঘুরে দাঁড়াই ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে… সাথে সাথে মহাপুরুষের মাথা ঘোরে আমার পানে… তাকায় মুখ তুলে… ইসসস… ঠোঁটে দেখো… কি অদ্ভুত নিষ্পাপ হাসি লেগে রয়েছে… হাত তোলে আমার দিকে তাকিয়ে… ডাকছে আমায়? চোখ সরু করে তাকাই আমি… ভেবেছিলাম তাকাবোই না ওই দিকে কিছুতেই… কিন্তু কে জানে কেন!… মুখ ফিরিয়ে নিতে পারলাম না আমি… দূর থেকেই একটা মিষ্টি হাসি হেসে হাত ছানি দিয়ে ডাক দেয় দিমিত্রিভ আমায়… আর আমিও কেমন সুরসুর করে গিয়ে দাঁড়ালাম ওর সামনে…
“হাই…” আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে দিমিত্রিভ… হাসলে ওকে সত্যিই ভিষন মিষ্টি দেখায়… ওর হাসিগুলো যেন শুধু ঠোঁটে নয়, চোখেও খেলে বেড়ায় কেমন অদ্ভুত ভাবে… চোখের দুপাশের চামড়াগুলো কুঁচকে যায় হাসির টানে…
‘হাই…” প্রত্তুতোরে মৃদু হাসি আমিও… এটা একান্ত জোর করে হাসি টেনে আনা, কিন্তু উপর থেকে সেটা যতটা পারি না বোঝাবার… মাথাটা তো এখনও জ্বলছে আমার… কিন্তু এ ছেলেকে সে সব বুঝিয়ে কি লাভ? এ সব বোঝার মত ক্ষমতা আছে নাকি ওর? তা না হলে আমায় এতক্ষন ওই দূরে টেবিলে অপেক্ষা করিয়ে রাখতো? সব চেনা হয়ে গেছে… সব ক’টা পুরুষই সমান… নেহাত ডিরেক্টর রয়েছে উপস্থিত… নয়তো কোন শালা এখানে এই ভাবে দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো!… বয়ে গেছে আমার থাকতে…
“হ্যাভ আ সিট ডক্টর…” পাশের চেয়ারটার দিকে ইশারা করে বলে ওঠে দিমিত্রিভ… “উই হ্যাভ সামথিং টু সে ইয়ু…”
আমি আবার একটা হাসি টেনে এনে ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে উঠি… “ইটস্ ওকে… টেল মী… অ্যাকচুয়ালি আই হ্যাভ টু মুভ নাও… আই হ্যাভ মাই রাউন্ড টু ডু…”
আমার রাউন্ড আছে শুনে যেন এবার একটু ব্যস্ত হয়ে ওঠে দিমিত্রিভ… তাড়াতাড়ি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ও… না চাইলেও ওকে সামনে থেকে দেখে বেশ ভালো লাগে আমার… আজকে একটা সাদা ফানেলের শার্ট আর ব্লু জিন্স পড়ে এসেছে… লম্বা চেহারায় বেশ মানিয়েছে… গালে হাল্কা দাড়ি… বড় বড় চুলগুলো মাথার উপরে এলোমেলো হয়ে এলিয়ে রয়েছে… দেখে ফের আমার মনের মধ্যে যিশুর ছবিটা যেন ভেসে উঠল একবার…
“উই ওন্ট টেক মাচ টাইম অফ ইয়োর্স…” তারপর হাত তুলে একবার ডাইরেক্টরকে দেখিয়ে বললো… “উই হ্যাভ বিন ডিসকাসিং… ফ্রম নাও অনওয়ার্ডস… ইয়ু উইল অ্যাসিস্ট মী রিগার্ডিং অল ক্রিয়েটিভিটিস দ্যট রিকয়ার্ড ফর দ্য প্লে…” একটু থেমে ফের বলে উঠল সে… “ইয়ু আর আ বর্ন আর্টিস্ট… আর্ট ইজ ইন ইয়োর ব্লাড… আই ওয়ান্ট দ্যট টু মেক ইট কাম আউট ইন দ্য সার্ভিসেস…”
“ইজ ইট সো?” আমি যেন আমার কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না… নাটকের সমস্ত ক্রিয়েটিভিটিতে আমি থাকবো? আমার আঁকা এতটাই ভালো লেগেছে দিমিত্রিভের?
“ইয়েস ডক্টর… ইয়ু আর আ জেনিউনলী ট্যালেন্টেড ওয়োম্যান… আই আপ্রিশিয়েট ইয়োর ট্যানেল্ট…” মৃদু হেসে বলে ওঠে দিমিত্রিভ… ওর চোখের ভাষা দেখে বুঝতে ভুল হয় না আমার যে এই কথাগুলোর মধ্যে কোন চাটুকারিতা বা আমায় শুধু মাত্র ইম্প্রেশ করার জন্য বলছেনা সে… সততই আমার আঁকা ওর পছন্দ হয়েছে, তাই এই ভাবে আমার নাম রেকমেন্ড করেছে ডিরেক্টরের কাছে… আমার মনের ভিতরে খানিক আগের সমস্ত অভিমান যেন নিমেশে গলে জল হয়ে গেলো… আমি একটা বাচ্ছা মেয়ের মত আনন্দ জড়িয়ে ধরলাম দিমিত্রিভকে… “থ্যাঙ্ক ইয়ু… থ্যাঙ্ক ইয়ু সো মাচ ফর গিভিং মী আ চান্স… আই’ল ট্রাই মাই বেস্ট টু গীভ…”
এরপর যেন ঝড়ের মত দিন কাটতে লাগলো… সকাল থেকে আমার হস্পিটাল ডিউটি… রাউন্ড দেওয়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে… শিডিউল ধরে সার্জারী… আর তারপর বিকেলের পর থেকে নিজের চরিত্রের রিহার্সাল আর সেই সাথে দিমিত্রিভের সাথে বসে একের পর এক সেটএর ডিজাইন, প্রতিটা ক্যারেক্টারের আলাদা আলাদা ডিজাইন করা শুরু করে দিলাম… দিমিত্রিভ বেশির ভাগটাই আমায় দিয়েই করাতো… ও শুধু উপর থেকে ইন্সপেক্ট করে যেত… যেখানটায় যেটা বেমানান মনে হতো বা আমার কল্পনার সাথে কোথাও মিলতো না, তখন আমার সাথে বসে দেখিয়ে দিত, আলোচনা করে একটা কিছুতে ফাইনালাইজ করতো…
এর ফলে প্রায় প্রতিটা দিনই আমার ফিরতে ফিরতে অনেকটাই রাত হয়ে যেত… প্রথম দিকে আমার জন্য ডিউটের পরে জোর্ডি অপেক্ষা করত… কিন্তু আমি ওকে অনেক বুঝিয়ে সেটা বন্ধ করিয়েছি… ওকে প্রায় জোর করেই বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম… যাতে ও বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিতে পারে… কারন হস্পিটালে ওরও তো যথেষ্টই চাপ থাকে… প্রথম দিকটা গাঁইগুই করলেও, শেষে আর না করতো না… যাবার আগে আমার সাথে একবার দেখা করেই চলে যেতো বাড়ি… কত দিন হয়েছে, বাড়ি ফিরে দেখেছি জোর্ডি আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে সোফাতেই… খারাপ লাগতো ওকে ডেকে তুলতে…
দেখতে দেখতে সেই দিনটাও এসে গেলো… আগের দিন আমার স্টেজ রিহার্সাল হলো… সেখানে হস্পিটাল থেকে ম্যানেজমেন্ট এসে দেখে গেলো… কারন ফাইনালের দিন অনেক ডেলিগেটস্রাও আসবে নাটক দেখতে… সকাল থেকেই রীতি মত উত্তেজিত ছিলাম… যতই হোক… লীড রোল আমার… আগে কখনও কোন দিন স্টেজ পার্ফরম করি নি… তাই একাধারে যেমন উত্তেজনা… তেমনি প্রচন্ড ভয়… যদি শেষ মুহুর্তে গুলিয়ে ফেলি? ভুল সংলাপ বলে দিই? আমায় জোর্ডি আর দিম্মি… ও হ্যা… দিমিত্রিভের সাথে কাজ করতে করতে ওকে আজকাল দিম্মি বলেই ডাকি… ছোট করে… তা ওরা দুজনেই আমায় অভয় দিয়ে গিয়েছে বার বার… বলেছে আমি ঠিক পারবো… কোন ভূল হবে না কোথাও…
নাহ!… হয়ও নি কোন ভূল… একেবারে পার্ফেক্ট পার্ফমেন্স… প্রথমে যখন স্টেজে এন্ট্রি নিয়েছিলাম তখন বুকের মধ্যেটায় যেন ঝড় বইছিল… দিম্মি নিজের হাতে আমার বডি পেংটিং করে দিয়েছিল… এই ক’দিন ওর সাথে থাকতে থাকতে আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা ভিষন সহজ হয়ে উঠেছিল… কাজের ফাঁকে আমরা একে অপরের সাথে খুনসুটি করতাম… দুপুরে লাঞ্চটাও সারতাম এক সাথেই প্রায় দিনই… সাথে কখনও জোর্ডি এসে যোগ দিতো, কখনও অন্য কেউ… তাই নাটকের দিন যখন ব্যাক স্টেজের গ্রীনরুমে আমায় কাপড় খুলে দাঁড়াতে বলল, খুব একটা অস্বস্থি হয় নি আমার সেদিন… একটা সেদিন ব্রা আর প্যান্টি পড়ে ওর সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম… আর ও রঙ দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছিল আমার সারা দেহ… দেহের অনেক জায়গায় তুলে ধরেছিল তুলির টানে প্রচুর উল্কি… শেষ হলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম আর্শির সামনে… এ যেন আমি না… সত্যিই ইতিহাসের পাতা থেকে ক্লিয়পেট্রা এসে দাঁড়িয়েছে আর্শির সামনে… আমি নিজেই নিজেতে মহিত হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন… আমার পেছনে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছিল দিম্মি… হয়তো নিজের সৃষ্টির সন্তুষ্টিতে…
সত্যি বলতে প্রথম যখন ওর সামনে নিরালা নির্জন গ্রীণরুমে গায়ের সমস্ত জামা কাপড় খুলে একেবারে নগ্ন হয়ে দাঁড়ালাম… তখন মনের মধ্যে একবার একটা কথা মনে এসেছিল… আমায় এই ভাবে দেখে দেখি কোন রকম সুযোগ নেয় কিনা দিম্মি!… দেহে রঙের প্রলেপ দেবার নাম করে আমার গোপনাঙ্গে কি ভাবে ছোঁয়া দিয়ে যায় ও… একটা মেয়েলি কৌতুহল যে মনের ভিতর ছিল না সেটা অস্বীকার করবো না… কারুর সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়ানো আমার কাছে কোন বড় কথা নয় কিন্তু দিম্মি কি ভাবে আমার নগ্নতাটা গ্রহন করে সেটাই দেখার ইচ্ছা ছিল মনে মনে…
নাহ!… আমি সত্যিই আপ্লূত দিম্মির প্রফেশনালিজম্ দেখে… আমার সারা শরীরে নানা উল্কির টান দিয়ে গেলো তুলি দিয়ে কিন্তু এতটুকু সুযোগ সে নেয়নি কোন সময়েই… চাইলেই পারতো সেটা… আমারও বলার কিছু ছিল না কারন আঁকার সময় ছোঁয়া লাগার কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না… কিন্তু অদ্ভুত নির্লিপ্ততায় নিজের কাজ শেষ করে ফেললো সে… আমার মনের মধ্যে এতটুকু কোন অস্বস্থি সৃষ্টির সুযোগ না দিয়ে…
স্টেজের সেন্টার সার্কেলে গিয়ে দাঁড়াতেই আমি আমার মধ্যে যেন অদ্ভুত ভাবে আর থাকলাম না… আমি সম্পূর্ণ ভাবে তখন ক্লিয়পেট্রা হয়ে গিয়েছি… স্টেজের ওপারে যে ওই বিশাল অডিয়েন্স আমারই দিকে তাকিয়ে রয়েছে… তাও যেন সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম…
সম্বিত ফিরলো একেবারে নাটকের শেষে… ওই বিশাল অডিটরিয়ামে যখন প্রতিটা শ্রোতা উঠে দাঁড়িয়ে এক সাথে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিল… সত্যিই বলছি… আমি ওই মুহুর্তটা কিছুতেই যেন ভুলে যেতে চাইছিলাম না… আমি আপ্লূত… বিমুগ্ধ… নিজেই নিজেতে… আমি সত্যিই পারলাম? এটা আমায় দিয়ে হলো?… কি করে জানি না সেদিন আমার চোখেও কোথা থেকে জল এসে গিয়েছিল…
.
.
.
মনটা ভারী হয়ে উঠেছে পর্ণারও… চন্দ্রকান্তার খুশিতে… এই ভাবে খুশিতেও কি মন ভারী হয়ে ওঠে? আসলে চন্দ্রকান্তার ডায়রি পড়তে পড়তে কি ভাবে যেন নিজেকে একাত্ম করে ফেলেছে সে… চন্দ্রকান্তার সাথে… চন্দ্রকান্তার দুঃখে তার চোখ ভিজে ওঠে আবার খুশিতে বুকের ভিতরটা উছলে ওঠে এক অনাবিল আনন্দে… এটাই বোধহয় মানুষের ধর্ম… অপরের মানসিকতার সাথে নিজেকে মিলিয়ে ফেলা… ডায়রিটা বন্ধ করে চুপ করে খানিক বসে থাকে সে… তারপর উঠে দাঁড়ায় বিছানা ছেড়ে… নাহ!… তাকে চুপ করে বসে থাকলে হবে না… নিজের প্রাত্যহিক কর্মযজ্ঞে কাজ করে যেতে হবে… চন্দ্রকান্তা চন্দ্রকান্তার জায়গায়, আর সে তার…

Leave a Reply