Bangla Choti Golpo
bangla golpo choti. আরে হেমেন দা?
হেমেন দা, সম্পর্কে কাবেরীর মামাতুতো দাদা। কাবেরির বয়স যখন সাত কি আট। হেমেন দা তখন যুবক। ছোট বেলায় পড়াশুনো কাবেরীর হেমেন দার কাছেই। হেমেন রায় যেমনই ইন্টেলেকচুয়াল, তেমন তার বোহেমিয়ান চরিত্র। বিয়ে-থা করেননি। আয় ইনকামও বিশেষ করেন না। মায়ের কাছে শুনেছিল কাবেরী, কাবেরীর দাদুর পূর্বপুরুষদের নাকি পুরুলিয়ার দিকে কোথায় জমিদারী ছিল একসময়। যদিও সেসব শোনা কথা, কাবেরী কখনো যায়নি। কাবেরী মামাবাড়ি বলতে বোঝে কৃষ্ণনগরে তার দাদুর বাড়ি।
কাবেরীর দাদু দীননাথ রায়, সেকেলে উকিল ছিলেন। কিন্তু তিনিও ছিলেন হেমেন দার মত, কাজ কারবার না করে অগাধ সম্পদ ভোগ করতে কৃষ্ণনগরে বানিয়ে ছিলেন দু কাঠা জায়গার ওপর বসত বাড়ি। সে বাড়ি আর নেই, মামারা যে যার বেচে সেটেল হলেন। এখন মামারাও কেউ নেই। মামার বংশে আত্মীয় বলতে এই হেমেন দা। সেই জমিদারী ভাঙিয়েই হেমেন রায়েরও চলেছে এতদিন। হেমেন দার গায়েও সেই রক্ত, যাবে কোথায়। দিব্যি দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান। এক কালে কবিতা টবিতা লিখে নাম করেছিলেন।
bangla golpo choti
কিন্তু কোথাও থিতু হতে পারেননি হেমেন রায়। দুতিন বছর পর হঠাৎ এ আত্মীয় ও আত্মীয় বাড়িতে থেকে আবার উধাও।
—-বহু কষ্টে বাড়িটা চিনলাম। তোকে তো এ পাড়ায় চেনে বলে কেউ মনে হয় না! তোর স্বামীর নাম বললাম।
কাবেরী হাসলো। বলল—বাব্বা! কোথায় যে হারিয়ে যাও। এই কতদিন পরে এলে বলতো। মনে থাকবেই বা কি করে।
হেমেন ঘরের চারদিক পর্যবেক্ষণ করে বলল–বাঃ বেশ সাজানো ঘর তোর। নিশ্চই তুই গুছিয়েছিস? তুই যে গোছনদার মেয়ে সে তো আমি জানি।
কাবেরী লজ্জা পেল। বলল—আমার স্বামীও কিন্তু বেশ সৌখিন।
— তা উনি কি আছেন?
—না, না। অফিসে….
—আর তোর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি?
—ভুলে গেলে হেমেন দা! আটবছর হল গত। শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ি মা দুজনেই পিঠোপিঠি বছরে চলে গেলেন। bangla golpo choti
সোফায় আয়েশ করে বসলেন হেমেন দা, বললেন—বয়স বাড়ছে খুকি। সব কি আর মনে থাকে। তোর আরেক ছেলে?
—ও বাইরে। ফিরতে দেরী হবে।
—কি যেন পড়ছে ওরা?
—একজন ফিজিক্সে অনার্স করছে, আইআইটিতে ভর্তি হতে চাইছে। আরেকজন এইচ এস দেবে। পিওর সায়েন্স।
—এক্সিলেন্ট, দুজনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর ভাববার কিছু নেই। ভালোই গড়েছিস দুই ছেলেকে। তা চাকরীটা করছিস নাকি, ছেড়ে দিয়েছিস?
ঈষৎ লাজুক মুখে হাসল কাবেরী। bangla golpo choti
হেমেন রায় খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো কাবেরীদের আয়তকার সৌখিন ড্রয়িং রুমটা। দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথের ঢাউস ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললেন—বিয়ের আগে থেকেই তো মনে হয় না রে তুই চাকরিটা করছিস?
—-হুম্ম। মিক্সিতে শরবত তৈরি করতে করতে বলল কাবেরী।
হেমেন দা কাঁধের শান্তিনিকেতনী ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে বললেন—-পড়িস খুকু। আমার নতুন কবিতার বই।
—ওমা তুমি এখনো কবিতা লেখো হেমেন দা?
—যতটুকু পারি রে। বুড়ো বয়সে কি করি বলতো।
—জানো হেমেন দা, আমার এক বন্ধুও লেখে। ও আগে কলকাতায় থাকতো। এখন নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে আছে। অধ্যাপনা করে।
— তুই কি অসিত মজুমদারের কথা বলছিস? bangla golpo choti
—তুমি চেনো? শরবতের গেলাসটা হেমেনের সামনে টেবিলটায় রাখলো কাবেরী।
—চিনব না কেন? বড় ভালো ছেলে। আমার কাছে ইলাস্ট্রেশন শিখতে আসতো।
—ও মা গো। অসিত তো কখনো বলেনি। ও আর ওর স্ত্রী দুজনেই আমাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। কত কবি বন্ধুদের নিয়ে এ বাড়িতে আসার বসিয়েছে। কই তোমাকে তো কোনোদিন দেখিনি?
—আমি এসব আসর টাসর এড়িয়ে যাই বুঝলি। তুইও লিখিস টিখিস নাকি?
—ধ্যাৎ। আমি আবার লিখব। একবার চেষ্টা করেছিলুম। আমার বর শুনে যা হাসলো!
—তোর বর বুঝি এসব পছন্দ করে না? হ্যা রে ছবি টবি তো বেশ আঁকতিস, এখনও…. bangla golpo choti
কাবেরীর মনে পড়ল স্কুল জীবনে তাকে হেমেন দা ই আঁকতে শিখিয়েছিল। বিয়ের পর অবশ্য কোনো একদিনের জন্যও কাবেরী ছবি আঁকেনি। একবার অরুণাভর এক মাসতুতো বোনের বিয়েতে আলপনা দিয়েছিল সে, তা দেখে অরুণাভ বলেছিল আরে তুমি যে এত ভালো আল্পনা দাও জানতাম না তো? ছবি টবি আঁকতে নাকি? কাবেরী প্রত্যুত্তর না দিয়ে নীরবে হেসেছিল।
দেয়ালের একটা ল্যান্ডস্কেপ দেখিয়ে কাবেরী বলল—ওটা আমার বড় ছেলের আঁকা। দুজনেই ভালো আঁকে। ওই গুনটাই যা ছেলেরা পেয়েছে।
হেমেন শরবতে চুমুক দিয়ে বলল—তুই স্কুল থেকে ফিরিস কখন?
—আমার সকাল স্কুল।
—তারমানে সারাদিন তুই এতবড় বাড়িতে একা থাকিস।
কাবেরী খুব আনমনা হয়ে হাসলো। হেমেন মিত্র আবার চুমুক দিল গ্লাসে। বলল—তোর বর তো ব্যাংকার, সময়-টময় পায়? bangla golpo choti
কাবেরী বুঝতে পারছে হেমেন দা তাকে পড়ে ফেলতে চাইছে। ছোটবেলা থেকে এই লোকটির কাছে তার পড়াশোনা। বিলক্ষণ মানুষ চেনেন হেমেন দা।—-এখন আর সময়ের কি প্রয়োজন হেমেন দা, চল্লিশ পেরিয়ে চুয়াল্লিশ হয়ে গেল।
—মেয়েদের বয়স বলতে নেই। আর তুই তো দিব্যি বয়স লুকোতে পারিস।
বড্ড হাসি পেল কাবেরীর। বলল—রাতে খাবে তো?
—না রে অনেক কাজ আছে। আসলে….
—ও মা! না খাইয়ে ছাড়ব নাকি?
—না রে খুকু। আসলে আমি এখন একটু থিতু হয়েছি। bangla golpo choti
পাপান বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল–মা খেতে দাও। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
কাবেরী ছেলেকে ইশারা করল। আজকের দিনে ছেলেদের প্রণাম করবার জন্য ইশারা করতে হয়, ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন সত্তরোর্ধ হেমেন। পাপান এসে পা ছুঁতেই, হেমেন রায় হাত দুটো ধরে বলল—থাক থাক বাবা, ভালো থেকো। তা কোথায় যাবে এই সন্ধ্যেতে? তাড়া কিসের।
—কোচিং আছে।
কাবেরী টেবিল থেকে গেলাসটা সরিয়ে নিয়ে ঠাট্টা করে বলল—বুড়ো বয়সে সংসার করলে নাকি?
—এক প্রকার তাই বলতে পারিস। বাংলা-ঝাড়খন্ড বর্ডারে হাঁসড়া বলে একটা গ্রাম আছে। সাঁওতাল পরগনায় বলতে পারিস। আগে জঙ্গল তরাই বলে পরিচিত ছিল। তুই তো জানিস আমাদের দেহে জমিদারী রক্ত বইছে। bangla golpo choti
‘আমাদের’ কথাটায় খটকা লাগলো কাবেরীর। মায়ের বংশের দিক দিয়ে অবশ্য কথাটা ঠিক, সে অর্থে তার দেহেও জমিদারী বংশের রক্ত আছে। কিন্তু কাবেরীর বাবা ছিলেন স্কুল মাস্টার। কাবেরীর ঠাকুরদা নাকি স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন। যদিও কাবেরী তাঁকে কখনো দেখেনি। কাবেরীর জন্মের আগেই তিনি গত হয়েছেন। কাবেরী হেমেন দাকে থামিয়ে দিয়ে বলল— হেমেন দা। একটু বোস। ছেলেটাকে খেতে দিয়ে আসি। তারপর বসে গল্প করব।
রাত্রে খাবার টেবিলে কাবেরী বলল—-জানো আজ হেমেন দা এসেছিল।
ঘুগনির বাটিতে পেঁয়াজ কুচি ছড়াচ্ছিল অরুণাভ। মাথা না তুলেই বলল—কে?
—-হেমেন দা।
—ওই তোমার মামাতুতো দাদা? অরুণাভ কপাল কুঁচকে ছেলেদের দিকে তাকালো—এই তোরা থামবি? bangla golpo choti
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট দল ঘোষণা হয়েছে। তাই নিয়ে দুই ছেলেতে তর্ক বেধেছে। এর জায়গায় ও হলে ভালো হত, এর জায়গায় ও, এইসব। তাতানের একেবারে পছন্দ হয়নি টিমটা। কলেজে ঢোকার সুবাদে তাতান এখন সর্বজ্ঞ। তিন বছরের ছোট ভাইকে পাত্তাই দেয় না। পাপানও কম যায় না। স্কুলের টিমে কোনো দিন তাতান চান্স না পেলেও, পাপান ক্রিকেট থেকে ফুটবল সব টিমেই চান্স পায়। আর তা নিয়ে একটা টিটকিরি দিতেই রেগে উঠল তাতান—বাপি দেখলে আমাকে কেমন স্টুপিড বলল!
অরুণাভ একটু ধমকের সুরে বলল—পাপান, দাদার সাথে যদি ভদ্র ভাষায় কথা না বলতে পারো, তাহলে এসব তর্ক করতে যেও না।
পাপান গোঁ মেরে চুপ করে গেল। অমনি তাতান বলে উঠল—ইডিয়ট!
—দেখছ বাপি আমাকে ইডিয়ট বলল, তার বেলা? ফস করে উঠল পাপান।
কাবেরী বিরক্ত হয়ে বলল—তোরা চুপ করবি? নাকি দুটোকেই বাইরে বের করে দেব। সারা রাত রাস্তায় দাঁড়িয়ে তর্ক করিস। bangla golpo choti
পাপানটা দাদার মত জেদী নয়। ধমক খেয়ে খাওয়ায় মনযোগ দিল। তাতান গোঁ মেরে রয়েছে। কাবেরী বুঝতে পেরে বড় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করতে করতে বলল—যাক বাবা খেয়ে নে, ভাইটা তো জানিস ছোট। কি নয় কি বলে ফেলে।
অরুণাভ আড় চোখে দেখে বলল—আর মাথায় তুলতে হবে না। এই আদর দিয়েই দুটোকে মাথায় তুলেছ।
যদিও মাথায় তোলার বিষয় হলে অরুণাভ কাবেরীর চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। কাবেরী বরং বকাঝকা করে থাকে, অরুণাভ সে ক্ষেত্রে কমই। অরুণাভ চামচ দিয়ে ওমলেট কাটতে কাটতে বলল—হ্যা কি যেন বলছিলে?
—হেমেন দা এসেছিল।
—হঠাৎ, এত বছর পরে!
—কেন বোনের সাথে দাদা দেখা করতে আসতে পারে না নাকি?
—না না। লোকটা ভ্যাগাবন্ড তো। সে বার ওই পাঁচ হাজার টাকা… bangla golpo choti
অরুণাভ ব্যাংকের পেশাদার ভল্ট ম্যানেজার। টাকা পয়সার হিসেব যতই সামান্য হোক, মনে থাকে তার। হেমেন দা সেবার একটা পাঁচ হাজার টাকা জরুরী প্রয়োজন বলে নিয়েছিল। তারপর, বহু বছর বেপাত্তা।
কাবেরী মৃদু অথচ উত্তাপ রেখে বলল–আমার দাদুর জমিদারী ছিল। হেমেন দার টাকা পয়সার অভাব নিশ্চই থাকার কথা নয়। নির্ঘাত কোনো জরুরী দরকারে..
—তারপর তো আর বিষয়টা উনি মনে রাখেননি। যাইহোক কি বলছিলেন উনি?
—-আমার দাদু দীননাথ রায়ের পূর্বপুরুষেরা জমিদার ছিল এ কথা মায়ের কাছে বহুবার শুনেছি।
অরুণাভ ঠাট্টা করে বলল—তা সেই জমিদারী কি ফিরে পেলেন কাবেরী দেবী?
তাতান-পাপানও ফিক করে হেসে উঠল। মায়ের কাছে মামাবাড়ির এই জমিদারীর গল্প বহুবার শুনেছে তারাও। যে জমিদারী তাঁদের মায়ের কাছেই উপকথার গল্পের মত, আজকের এই মেট্রপলিটন যুগে তাদের কাছে বরাবরই হাস্যকর মনে হয়।
কাবেরী সংযত ভাবেই বলল—ফিরে পাওয়াই বলতে পারো। bangla golpo choti
—ইন্টারেস্টিং। অরুণাভ খাবার প্লেটের ওপর জল দিয়ে হাত ধুয়ে উঠতে লাগলো। বহুবার কাবেরী বারণ করেও অরুণাভর এই অভ্যেস বদলাতে পারেনি।
কাবেরীর আজ সেদিকে নজর নেই। ও কথাটা সম্পুর্ন করতে লাগলো—ঝাড়খন্ড-পুরুলিয়া বর্ডারে নাকি একটা হাঁসড়া বলে গ্রাম আছে।
—হ্যা জানি তো। বাঘমুন্ডি থেকে আরো ভেতরের দিকে। পাহাড়ি এলাকা।
—তুমি জানো? গিয়েছ? কাবেরী স্বামীর দিকে উৎফুল্ল হয়ে তাকালো।
—যাইনি। তবে শুনেছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে আমার চাকরির শুরুটা তো পুরুলিয়াতে জানো।
—ওই হাঁসড়া গ্রামেই নাকি দাদুর এখনো বাড়ি সমেত সম্পত্তি রয়েছে। হেমেন দা এখন ওখানেই থাকেন। স্থানীয় মুন্ডা আদিবাসীদের জন্য কাজ করছেন। ওঁর খুব ইচ্ছে ওই জমিরই একাংশে একটা স্কুল গড়বেন। bangla golpo choti
—বাঃ। ভদ্রলোকের এতদিনে সুবুদ্ধি হয়েছে। লোন টোন লাগলে হবে না বাপু। ওটা ঝাড়খন্ড স্টেটে পড়ে।
বিরক্ত দেখালো কাবেরীকে। তার স্বামী মানুষটির এই টাকা পয়সা সংক্রান্ত বাড়বাড়ন্ত ভালো লাগে না।
—হেমেন দা ঠিক এটা বলতে আসেননি। ওই জমি-বাড়ি দাদু নাকি উত্তরসুরি হিসেবে যতটা হেমেন দার নামে রেখেছেন, ততটা আমার নামে। কাজেই স্কুল গড়তে হলে আমারও সহযোগিতা লাগবে বৈকি।
অরুণাভ কাবেরীর পিঠে হাত রেখে বলল—সে তোমার ইচ্ছে। তোমার সম্পদ কিভাবে তুমি ইউটিলাইজ করবে, তুমিই ঠিক করবে।
—আমার একবার ইচ্ছে আছে গিয়ে দেখার। সামনের মাসেই তো গরমের ছুটি, যাবে?
—মাথা খারাপ। আমার চাকরিটা তোমরা সকালের প্রাইমারী স্কুল নয় ডার্লিং। যে গরমের ছুটি, পুজোর ছুটি, শিশু দিবসের ছুটি, শিক্ষক দিবসের ছুটি। অরুণাভ জলের জগ থেকে গেলাসে জল ঢালতে ঢালতে চোখ না তুলেই বলল। bangla golpo choti
—আমি কি তাই বলছি, ছুটি নিলেই তো পারো।
অরুণাভ জল খেয়ে হাতের কাছে তোয়ালে খুঁজে না পেলে প্রায়শই কাবেরীর শাড়ির আঁচলে মুখ মোছে। ছেলে দুটোরও অভ্যাস এক। একে একে ওরা মুখ মুছতে লাগলো মায়ের শাড়ির আঁচলে। পাপান বলল—আমি যেতে পারবো না। কোচিং ক্লাস বন্ধ করা যাবে না।
কথাটা ঠিক। সামনের বছর পাপানের এইচ এস।
বাড়িতেও প্রাইভেট টিউটর আসেন। তাতান তো একেবারেই গররাজি, ও এমনিতেই বইমুখো। কাবেরীর অবস্থা দেখে হাসলো অরুণাভ। বলল—তুমি একাই তো যেতে পারো।
—একা? আমি কখনো গেছি।
—কেন বিয়ের আগে যাওনি? ওই যে বলেছিলে তোমাদের কলেজের এক্সকার্সনে। bangla golpo choti
সত্যি, কাবেরী বিয়ের পর থেকে এই বাইশ বছর বাপের বাড়ি যাওয়া ছাড়া কখনো কোথাও দূরে একা যায়নি। যদিও কাবেরীর বাপের বাড়ি চুচুড়ায়। কলকাতা থেকে চুচুড়াকে খুব একটা দূর বলা যায় না। ছেলে দুটোকে নিয়ে একবার তাতানের স্কুলের ট্যুরে মুকুটমণিপুর গিয়েছিল বটে, এইটুকুই। কিন্তু অতদূর অজানা জায়গায় একা, কাবেরী ভেবে দেখেনি। বিয়ের পর অরুণাভর সাথে কিংবা ছেলে দুটো হবার পরও কাশ্মীর, দার্জিলিং, উটি, আন্দামান বহু জায়গা ঘোরা হয়েছে। তবে সবটাই অরুণাভ ছিল বলে।
+++++++
হেমেন দা ডানলপের দিকে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন। স্কুলটা আংশিক চালু করেছেন। সম্পূর্ন গড়ে তুলতে গেলে আরও অর্থ লাগবে। কলকাতায় হেমেন রায়ের অনেক ছাত্র আছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে উদ্যোগ নিতেই তিনি কলকাতা এসেছেন। কাবেরী বলেছিল–এই কটা দিন আমার বাড়িতেই রয়ে গেল পারতেন। হেমেন রায় মৃদু হেসে বলেছেন—আমি হলাম বুনোহাঁস রে, খুকি, তোর এত বড় হিমশীতল বাড়ীতে আমার পোষাবে না। কথাটা আন্দাজ করতে পেরেছিল কাবেরী। bangla golpo choti
গত রবিবার দুপুরে কাবেরী ডেকেছিল হেমেন দাকে। দুপুরে খাবার পর হেমেন দার সাথে গল্প করছিল অরুণাভ। মালতী কদিন ছুটিতে। কাবেরী তখন রান্নাঘরে একটার পর একটা বাসন ধুয়ে শেলফে তুলছিল। অরুণাভর অর্থনীতিবিদের মত ব্যবহার শিল্পী হেমেনদার ভালো লাগেনি। অথচ অরুণাভ প্রথম দিকে এমন ছিল না। যতদিন এগিয়েছে পদন্নোতির সাথে সাথে লোকটার জগৎ পাল্টে গেছে। এখন বাড়িতে ফিনাশিয়াল এক্সপ্রেস, ইকোনমি টাইমস এসব কাগজ ঢোকে। এ লোন, ও লোন, নানা লোকের সাথে ফোনে কথা বলতে থাকে মানুষটা।
রাতে শোওয়ার আগে চুল বাঁধতে বাঁধতে কথাটা তুলল কাবেরী—হেমেন দা বলছিল পরশুর ট্রেনে চলে যাবে।
অরুণাভ লম্বা টান দিয়ে শুয়ে কি একটা বই পড়ছিল। মুখ না তুলেই বলল—হুম্ম।
—-দু একদিনের মধ্যে স্কুলে ছুটি পড়বে।
এবার চোখ তুলল অরুণাভ।—তাহলে তুমি কি ঠিক করলে? যাবে? bangla golpo choti
—স্কুলের ছুটি তো মাত্র একমাস। আমি ভাবছি আরো দিন পনেরো ছুটি নেব।
—এত ছুটি নিয়ে কি করবে? কটা দিন কাটিয়েই তো ঘুরে আসতে পারো।
—অনেক দিন কোথাও যাই না।
—তা বলে দেড় মাস! ওখানে এখন টেম্পারেচার জানো? আমার ফর্সা বউটা কালো পড়ে যাবে যে।
কাবেরী বিছানায় উঠতে অরুণাভ বইটা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রাখলো। কাবেরীর দিকে ঘুরে পেটের উপর হাতটা রেখে বলল—তার মানে দেড় মাস তোমাকে কাছে পাচ্ছি না।
কাবেরী মৃদু হাসলো। বাইশ বছরের দাম্পত্যে ইঙ্গিত বুঝতে তার অসুবিধা হয় না। দেড় মাস কাছে থাকবে না বলে অরুণাভ যে আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে, সেই আদিখ্যেতা তাদের মধ্যে অন্তত মাস খানেক হয়নি। bangla golpo choti
কাবেরী সায়ার দড়ি আলগা করল। ট্রাউজারের দড়ি খুলতে শুরু করেছে অরুণাভও।আলতো করে চুমু দিল কাবেরীর কপালে। আগে অমন চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিত অরুণাভ। শাড়িটা ঠেলে ওঠাতে লাগলো অরুণাভ। খুঁজে নিতে দেরী হল না তার, যথাস্থানে পুরুষাঙ্গটা ঢুকিয়ে দিয়ে কাবেরীর বাম স্তনটা ব্লাউজের উপর চেপে ধরল। মৃদু গতিতে কোমর সঞ্চালন করতে লাগলো। হালকা দুলুনিতে বেশ বুঝে সুঝে রোমান্টিক ভাবেই সঙ্গম করে অরুণাভ। কাবেরী স্বামীকে আগলে রাখলো দু হাত দিয়ে। ভালো করে পা দুটো মেলে দিয়েছে ও।
ফর ফর করে শ্বাস নিচ্ছে কাবেরী। পাশের ঘরে তাতান রাত জেগে তখনও পড়ছে। শব্দটা নিয়ন্ত্রণ করল সে। বরং অরুনাভই একটা কেঁপে কেঁপে শব্দ করছে। যদিও তা মৃদু। ঘরের দরজার বাইরে কান পাতলেও শোনা যাবে না।
আরেকটু চাইছিল কাবেরীর শরীর। অরুণাভ থেমে গেল। কাবেরী উঠে পড়ল ঝটপট। বিছানা থেকে নেমে স্যান্ডেল গলিয়ে চলে গেল বাথরুমে। ফিরবার সময় দেখলো পড়ার টেবিলে ঝুঁকে পড়ে তাতান অঙ্ক কষছে আনমনে। পাপানটা ঘুমে কাদা। বেডরুমে ঢুকতেই অরুণাভ বলল–এসিটা বাড়িয়ে দাও তো। bangla golpo choti
কাবেরী পাশ ফিরে শুয়ে স্বামীর নগ্ন পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বলল—আচ্ছা, সামনের মাসে তুমি ছুটি পাবে না?
—আহা। কি করো কাবেরী। ঘুম পাচ্ছে এখন। তোমাকে কি আমি যেতে বারণ করেছি?
অরুণাভর এমন কথায় আহত হল কাবেরী। তার কি নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই? অরুণাভ বারণ করলে কি সে যেত না? ক্ষীণ প্রতিবাদ করে বলল—আমি একা একা যাবো অদ্দুর…
অরুণাভ কাবেরীর থেকে সরে গিয়ে বলল—অহেতুক ঝগড়া বাধিও না তো।
কাবেরী ঝাঁঝিয়ে উঠল—আমি ঝগড়া করছি?
অরুণাভ স্ত্রীর মেজাজ বুঝতে পেরে ঘুরে পড়ল কাবেরীর দিকে। গাল ছাড়িয়ে হাসল,—লাইফটা এনজয় করতে শেখো কাবেরী। তোমার হাতে তো অফুরন্ত সময়। স্বামী নামক বস্তুটির ওপর খামোখা রাগান্বিত হওয়া কমবে বৈকি। এখন আমায় ঘুমোতে দাও। bangla golpo choti
অরুণাভর এই হাসিটা আজকাল কাবেরীর বড্ড বিরক্তিকর লাগে। এই হাসি যেন তাচ্ছিল্যের হাসি। কাবেরীর আজকাল দেরীতে ঘুম আসে। তাতানের ঘরের টেবিল ল্যাম্পের আলো ছড়িয়ে পড়ছে ড্রয়িং রুমে। আইআইটির প্রিপারেশন নিচ্ছে ও। ছেলেটার একাগ্রতা ভীষণ। চোখে স্বপ্ন। সকলের যেমন থাকে। কাবেরীর নেই। কতক্ষণ এপাশ-ওপাশ হল। এই লাইফ এনজয়ের ব্যাপারটা কাবেরীর মাথায় একেবারেই আসে না।
সকাল থেকে স্কুলে আর সংসারের একটার পর একটা দিন পেরোতে পেরোতে যখন ছেলেরা বড় হয়ে গেল, তখন দেখতে পেল চারপাশটা কেমন নিঃসঙ্গ হয়ে রয়েছে। অরুণাভর কথাটা তখন থেকে ভাবাচ্ছে তাকে। হয়ত তার নিঃসঙ্গতার এটাও একটা কারণ। তার জীবনটা বড্ড একপেশে, দেওয়ালে আঁটা ক্যালেন্ডারের মতন। ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র অসীমকেই তার স্বল্প হলেও ভালো লাগতো। অসীমের কবি কবি ভাবটার জন্যই হয়ত। bangla golpo choti
বাংলায় এমএ করায় অসীমের এটা সহজাত হয়ে গিয়েছিল। কাবেরীকে ওর পছন্দ ছিল। যদিও কাবেরী ওকে তেমন পছন্দ না করলেও, আবার অপছন্দও করত না। তবে অসীমের প্রতি কাবেরীর কোনোদিন প্রেম জেগে না ওঠায় সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। অসীম এখন কলেজে অধ্যাপনা করে। বেশ কয়েকটা কবিতার বইও বেরিয়েছে অসীমের। গড়িয়াতে থাকত কিছুদিন আগে পর্যন্ত। মাত্র ছয় মাস হল বদলি হয়ে চলে গিয়েছে নর্থ বেঙ্গলে, ইউনিভার্সিটিতে।
মাঝে মধ্যেই ও কাবেরীদের বাড়ি আসত, কখনো কখনো ওর স্ত্রী ললিতাকেও সঙ্গে নিয়ে আসত। বিশেষ করে ওর নতুন কোনো লেখা ছাপা হলে কাবেরীর হাতে বইটা তুলে দিতে ও একবার আসবেই। অসীমের সাময়িক সাহিত্য চর্চাকেন্দ্রিক আড্ডার কারণে সংসার আর স্কুলের শিক্ষিকা জীবনের একঘেয়েমিতার মাঝে কাবেরী স্বল্পকালীন মুক্তি পেত তবুও। সুযোগ পেলে অসীম উপদেশও দিত দেদার। bangla golpo choti
কাবেরীর মধ্যে জীবনের ঘাটতি দেখে একদিন বলেছিল —–দেখ কাবেরী, বার্ধক্য আর বৃদ্ধত্ব এক নয়। বয়স আমাদের বার্ধ্যক এনে দেয়। আর বৃদ্ধত্ব আসে মন থেকে। দেখ না আমরা যে সব সাহিত্য সৃষ্টি করি, চরিত্রগুলোকে সজীব করি, সুন্দর করি, এককথায় যৌবনের দূত তৈরি করি, সেসব আমাদের মনের মধ্যে যৌবন থাকে বলেই। তা নাহলে বয়সের সাথে সাথে আমাদের সাহিত্যের চরিত্রগুলো লোলচর্ম হয়ে লাঠি ধরত।
অসীমের কথাগুলোর মধ্যে যুক্তি আছে। তখন কাবেরীর ইচ্ছে করত এই বয়সেও নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে দেখতে। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ছে তার। অন্যমনস্ক ভাবে সাজগোজ করতে করতে কতবার নিজেকে দেখেছে। খুব একটা প্রসাধন সে কোনদিনই করে না। মুখে একটু হালকা ক্রিম বা ফেস পাউডার, ছোট টিপ। স্কুলে বেরোলে সামান্য লিপস্টিক, ছোটখাটো গয়না ইত্যাদি। গায়ের উজ্জ্বল ফর্সা রঙটার লাবণ্য এখনো আছে। bangla golpo choti
কয়েক বছর আগেও চেহারাটা বেশ ছিপছিপে ছিল। পঁয়ত্রিশ বলে চালিয়ে দেওয়া যেত নিশ্চিত। ইদানিং শরীরে মেদ জমেছে। অপারেশনের ফলে শরীরটা একটু ভারী হয়েছে। হবেই না কেন চল্লিশ পেরিয়ে চুয়াল্লিশ হল। তবে তার মুখ থেকে যৌবনের কমনীয়তা পুরোপুরি মুছে যায়নি। এক ঢাল কালো চুল, ফর্সা ভরাট মুখে কাবেরী এখনো দীপ্তিময়ী। অরুণাভর বন্ধু মহলে তার রূপের খ্যাতিতে ভাটা পড়েনি এখনো। অসীমের স্ত্রী ললিতা দক্ষিণ ভারতের মেয়ে, অতশত বাংলা সাহিত্য বোঝে না ও।
তবে স্বামীর প্রতি অত্যন্ত পদাবনত পতিব্রতা গৃহিণী। ভারী মিশুকে মেয়ে। অসীম যখন কাবেরীদের ড্রয়িং রুমে সাহিত্য বাসর বসিয়ে ফেলত, ললিতা চা করে দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সামলে নিত দায়িত্বশীলা গৃহীনর মত। কাবেরীকে ‘দিদি’ বলে সম্বোধন করে ও, রান্না ঘরে ঢুকতে বারণ করে দিত। ললিতা খুব একটা রূপসী নয়, শ্যামলা গড়নের মুটকি ধরনের চেহারা। ও প্রায়শই বলে কাবেরীকে নাকি কোনো এক দক্ষিণী অভিনেত্রীর মত দেখতে।
++++++
চলবে